বগুড়ার ধুনটে পুলিশের ৫ ঘন্টা কৌশল অভিযানে প্রাণে বাঁচলো ৫ মাসের অন্তসত্ত¡া রহিমা বেগম (৩০) ও তার স্বামী পলাশ প্রামানিকের। সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় তাদের কে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে আনা হয়েছে।
সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ১২ বছর পূর্বে উপজেলার নিমগাছী গ্রামের পল্লী চিকিৎসক জিল্লার রহমানের মেয়ে রহিমা বেগমের সাথে মাজবাড়ী গ্রামের দুলাল প্রামানিকের ছেলে পলাশ প্রামানিকের ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া কলহ লেগেই থাকতো। দাম্পত্য জীবনের ৪ বছরের মাথায় রহিমার কোল জুড়ে আসে পুত্র সন্তান নীবর। বর্তমানের নিরবের বয়স ৮ বছর। স্বামী পলাশ প্রামানিক অলসতার কারনে সংসারের ঘানি টানতে না পারায় সংসারের হাল ধরতে স্ত্রী রহিমা বেগম প্রায় ৩ বছর আগে কাজ করতে সৌদিতে যান। সৌদিতে ২ বছর কাজ করে স্ত্রী রহিমা বেগম ১ বছর পূর্বে দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরার পর স্ত্রী রহিমা বেগম সংসারের হাল ধরতে স্বামী পলাশ প্রমানিককে গরু ব্যবসার জন্য কিছু পুঁজি দেন কিন্তু পলাশের ব্যবসায়িক কাজে মনোযোগ না থাকায় ব্যবসায়কি পুঁজিতে ঘাটতি পড়তে থাকে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য জীবনে আরো কলহ বিবাদ বেড়ে যায়।
রহিমা বেগম ৫ মাসের অন্তসত্বা হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার পিঠা ও ফল নিয়ে ৯/৮/২০২০ইং রবিবার বিকালে তার মেয়েকে দেখতে জামাই বাড়ী আসেন। শশুর-শাশুরীর সাথে জামাই পলাশের বনিবনাট না থাকায় জামাই পলাশ প্রামানিক শাশুরীকে গালি গালাজ করে। জামাইয়ের কথায় কষ্ট পেয়ে তাৎক্ষনিক শাশুরী তার বাড়ী ত্যাগ করে চলে যান। রহিমা তার মা কে গালি গালাজের প্রতিবাদ করে রহিমা। এতে তাদের ভিতরে আরো কলহ বেড়ে যায়।
তার ই জের ধরে সোমবার সকালে স্বামী পলাশ প্রামানিক তার স্ত্রী রহিমাকে আবারো গালি গালাজ করতে থাকে। এতে স্ত্রী রহিমা ক্ষীপ্ত হয়ে বলে তোর সাথে সংসার আর করা হবে না আমি বাবার বাড়িতে চলে যাবো। একথা বলার পরপরই স্বামী পলাশ ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে স্ত্রী রহিমাকে বেধে গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে বলে তোকে মেরে আমিও আত্মহত্যা করবো। তখন রহিমার আত্ম চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করার চেষ্টা করে। কিন্তু পলাশ দরজা না খোলায় তখন স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেয়ে।
খবর পেয়ে ধুনট থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা সঙ্গী ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ আব্দুর রশীদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) মোঃ গাজিউর রহমান। ঘটনাস্থলে পৌছার পর তারা পলাশের সাথে নানা ধরনের কথা বলে বুঝাতে থাকে এবং পলাশকে বাহিরে আসতে বলে। তখন পলাশ বলে কেউ ঘরের বেড়ার কাছে আসবে না আসলে মেরে দিবো।
প্রায় ৫ ঘন্টা কথার বলার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহযোগীতায় পলাশের চাচা শফিকুল ইসলাম কৌশল করে সীঁধ কেটে ঘরের ভিতরে ঢুকে এবং একই সময়ে পুলিশ প্রশাসন ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে জিম্মী দশা থেকে অন্তসত্ত¡া স্ত্রী রহিমা বেগম ও তার পাষান্ড স্বামী আত্মহত্যার হুমকি প্রদানকারী পলাশকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে। রিপোর্ট লেখাকালীন বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশীদ জানান, প্রায় ৫ ঘন্টা কৌশল অভিযানের পর ৫ মাসের অন্তসত্ত¡া স্ত্রী ও তার স্বামীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।