নিউইয়র্ক: আজ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশসমূহের ‘সামরিক বাহিনী প্রধানগণের সম্মেলন এর স্বাগত অনুষ্ঠান আয়োজন করল বাংলাদেশ। শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে সামনের সারির একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবদান ও সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে মর্যাদাপূর্ণ এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য জাতিসংঘ সদরদপ্তর বাংলাদেশকে মনোনীত করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী মিলিয়ে ৬৪ জন সামরিক প্রধান এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া সদস্য দেশসমূহের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতগণ এবং জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ প্রায় চারশত অতিথি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। কালজয়ী বাংলা গান ও বাঙালি খাবারে অতিথিদের আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিতে আবহমান বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে সম্মানজনক এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। আমরা তিনদশকেরও বেশী সময় ধরে জাতিসংঘের ব্লু হেলমেট এর অধীনে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সুনিপুণভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি ও তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছি। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। আমাদের শান্তিরক্ষীদের আমরা নিয়োজিত করেছি মানুষের অন্তর ও মন জয় করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের ফলে”। রাষ্ট্রদূত মাসুদ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বহুমূখী চ্যালেঞ্জসমূহের কথা উল্লেখ করেন এবং এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ সদা প্রস্তুত রয়েছে মর্মে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন।
‘সামরিক বাহিনী প্রধানগণের সম্মেলন’ উপলক্ষে আয়োজিত এই স্বাগত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড. মাহফুজুর রহমান। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর পক্ষে প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের যে প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা এসেছে আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে; আমরা সর্বদাই এ প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকবো”। এই সম্মেলন তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অন্যতম প্লাটফর্ম হিসেবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত সামর্থ্য বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে মর্মে মন্তব্য করেন জেনারেল মাহফুজুর রহমান।
জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সুদীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশিসময় ধরে গৌবরের সাথে অবদান রেখে চলেছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেরা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিস কিপিং এজেন্ডায় বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকারও ভূয়সী প্রশংসা করেন ল্যাক্রুয়া। তিনি বলেন, এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের এই সফলতা আপনাদের সক্ষমতারই বহি:প্রকাশ। সামরিক বাহিনী প্রধানদের এ সম্মেলন জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন অব পিস কিপিং এডেন্ডাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং শান্তিরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে মর্মে উল্লেখ করেন পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান।
জাতিসংঘের অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে এমন চমৎকার আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নীল হেলমেটের অধীনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আপনাদের অবদান ও আত্মোৎসর্গের প্রতি আমি বিনম্্র শ্রদ্ধা জানাই। তিনি কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সদস্যদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এই বিশ্বকে আরও শান্তির্পূণ করতে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রজ্ঞা, অংশীদারিত্ব, সমর্থন ও সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন অতুল খারে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজর লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লয়টে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শান্তিরক্ষী হিসেবে অভিহিত করেন। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের মিলিটারি অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার খান ফিরোজ আহমেদ ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক এর কনসাল জেনারেল মিজ্ সাদিয়া ফয়জুন্নেছা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মিশনের মিলিটারি অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার খান ফিরোজ আহমেদের কন্যা ফাবিহা তাহসিন। উল্লেখ্য সামরিক বাহিনী প্রধানগণের দু’দিন ব্যাপী এই সম্মেলন আগামীকাল ১১ জুলাই শেষ হবে।