১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শিরোনামঃ-




ভেষজ ঔষধের আরেক নাম শ্রীপুরের ডালেশ্বর গ্রাম

মোহাম্মদ ইমন মিয়া, বাঙ্গরা,কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর ২১ ২০১৮, ১৮:০৪ | 1023 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

সাইফুল আলম সুমন, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ডালেশ^র গ্রাম। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা বনজ, ওষধি তথা ভেষজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। ভাওয়াল বনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তারা বনজ লতা পাতা গুল্ম সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত করেন। পরে সেগুলো দেশের নামকরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীতে সরবরাহ করেন। ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে ডালেশ^র গ্রামে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের রীতি শুরু হয়। প্রথমে একজন, পরে একটি পরিবার এখন একটি গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে এর সাথে যুক্ত হয়েছেন। জীবিকার তাগিদে, ভৌগোলিক কারণে, চাহিদার খাতিরে ভেষজ সংগ্রহের দিকে ঝোঁকে পড়েন ডালেশ^র গ্রামের মানুষ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর বাজার পেরিয়ে এক কিলোমিটার ভেতরে যে গ্রামের শুরু তার নামই হচ্ছে ডালেশ^র। ভাওয়াল বনের ভেতর দিয়ে পিচ ঢালাই পথ। গ্রামে প্রবেশের পরই চোখে পড়বে উম্মুক্ত খলা। রোদে শোকানো হচ্ছে কুচি কুচি করে কেটে রাখা ভেষজ উদ্ভিদের টুকরা। খলার পাশে নারী পুরুষ একসাথে বসে কুটছে ভেষজ উদ্ভিদ। ঠক্ ঠক্ শব্দ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ কেউ আবার প্রতি ঘন্টায় রোদে শোকাতে দেয়া টুকরোগুলো উলটপালট করে দিচ্ছেন। দুপুরের পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। লতা গুল্ম নিয়ে খলায় ঢুকছে রিক্সা ভ্যান। এ গ্রামের বিভিন্ন খলার চিত্রগুলো ঠিক একই রকম। কোনো কোনো খলা আবার নিরাপত্তার খতিরে প্রাচীরঘেরা।

ডালেশ^র গ্রামের আব্দুল কাদির মিয়া(৭০)ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের ব্যবসায় এখনও নিয়োজিত রয়েছেন। তার ছেলে আইনুল মিয়া ব্যভসাটি আলাদা করেন। আব্দুল কাদির মিয়া বলেন, কমপক্ষে ৬০ বছর আগে তার বাবা মৃত ওয়াহেদ আলী মিয়া এ এলাকায় সর্বপ্রথম ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের কাজটি শুরু করেন। তখন ভাওয়ালের বন ছিল গভীর। নানা প্রজাতির প্রাণি থাকত বনের সব জায়গায়। নানা প্রজাতির লতা পাতা, গাছ পালার তো অভাবই ছিল না। বাবার সাথে ভেষজ সংগ্রহের কাজে সময় দিতে গিয়ে নিজেও জড়িয়ে পড়ি। ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে রূপ নেয়।

প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান বলেন, কমপক্ষে ৪০ বছর আগে তাদের দেখাদেখি তিার বাবাও এ পেশায় যুক্ত হন। বাবার সাথে সহায়তা করতে গিয়ে নিজেও ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন। দিনে দিনে ভেষজ সংগ্রহের কাজটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। তার মতো অনেকেই যুক্ত হন ভেষজ সংগ্রহের কাজে। প্রত্যেকেই পরিবারের সকল সদস্যদের এ কাজে নিয়োজিত করেন। ভেষজ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, পৈতৃকসুত্রে এ কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি। গাজীপুরের বাওয়াল বনাঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়। যারা বন থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন তাদেরকে অগ্রিম আনুমানিক টাকা দেয়া হয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে খলায় জমা করেন। ওজন ও পরিমাপ করে কম কম হলে টাকা ফেরত পাই এবং বেশি হলে আরও টাকা দিই।

ডালেশ^র গ্রামের পাশর্^বর্তী কয়েকটি গ্রামের কমপক্ষে শতাধিক মানুষ ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন গ্রাম, উপজেলা, জেলার সীমানা পেরিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন থেকে তারা এসব সংগ্রহ করেন। দরগাহচালা গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে আজম আলী বলেন, প্রতিদিন সকালে ভ্যানগাড়ী নিয়ে বিভিন্ন বনে, রাস্তার পাশে, বিলের পাড়, পুকুর পাড়, নদীর পাড় থেকে সারাদিন লতপাতাগুলো সংগ্রহ করি। সারাদিনে সর্বোচ্চ দুটি ভ্যানগাড়ী ভর্তি করা য়ায়। পরে এগুলো ব্যবসায়ীদের খলায় নিয়ে মণ হিসেবে বিক্রি করি।

একই গ্রামের হাসেন আলীর ছেলে আব্দুস শহীদ বলেন, যে উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায় তার দাম তুলনামূলক কম। যেটি দূর দুরান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় তার দাম একটু বেশি। যেমন নিমপাতা, বেলপাতা, শিশু পাতা ইত্যাদি ৫’শ টাকা মণ দরে ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করি। আমলকি, বহেরা ২ হাজার বা আড়াই হাজার টাকা মণ, হরিতকি, নিসিন্দা, কালো মেঘ, অর্জুন ছাল, এরকম ভেষজ জিনিসগুলো দামে একটু বেশি। ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে এগুলো সরবরাহ করে থাকি। ডালেশ^র গ্রামের ভেষজ খলার মালিক রাশিদা বলেন, তার খলায় লতাপাতা প্রক্রিয়াকরণে ২০ জন লোক কাজ করে। কেউ কাটাকুটি, কেউ শোকানো, কেউ আবার বস্তাভর্তি করাসহ নানা প্রক্রিয়ার কাজে নিয়োজিত। তাদের মুজুরী দেয়া হয় মণ হিসেবে। সংগৃহীত একেক ভেষজ একেক হিসেবে মজুরী দেয়া হয়। খলার মালিক মনির হোসেন বলেন, উম্মুক্ত খলায় শোকাতে গেলে নানা সমস্যা হয়। মানুষ, গরু, ছাগল খলায় ঢুকে ভেষজ উপাদান নষ্ট করে ফেলে। খলার মেঝে পাকা থাকলে প্রক্রিয়াকরণ সহজ ও সময় কম লাগত। সরকারী কোনো ঋণ সহায়তা পান না তারা।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

 

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET