১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শিরোনামঃ-




বয়স,বাধা মানে না ভালোবাসা!

প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

আপডেট টাইম : অক্টোবর ০৮ ২০১৮, ১৪:৫২ | 1853 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

মেহেদী হাসানঃ- ভালোবাসতে আসলে কি লাগে? মানুষ আসলে কি দেখে ভালোবাসে? বাড়ি-গাড়ী, টাকা-পয়সা, না শারীরিক সৌন্দর্য? কী মনে হয় পাঠক?

আমাদের অনেকের জীবনেই স্কুলে পড়বার সময়টায় কোন বিশেষ ম্যাডাম বা স্যারকে ভালো লেগে যাওয়ার মতো অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে যায়। আমরা অনেক সময় আবিষ্কার করতাম, সে ভালো লাগা কখনো আরো গাঢ় হয়ে রূপ নিতো ভালোবাসায়। ভালোবাসা কি বোঝার আগেই ভালোবেসে ফেলা সেসব ভালোবাসা না মানতো বয়স, না মানতো বাধা। কিন্তু সময় আর জীবনের নানা বাঁকে সেসব ভালবাসা প্রায় সবগুলোই ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে যায় চুপচাপ।

খুব অদ্ভুত কিছু ব্যতিক্রম বাদে!

ফ্রান্সের হাইস্কুল পড়ুয়া এমানুয়েল ম্যাকরন যখন হঠাৎ করে ড্রামা টিচার ব্রিজিত ট্রগ্নেয়াক্সের প্রেমে পড়ে গেল, তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। এবং তার টিচারের বয়স? মাত্র ৪০ তখন। তিন সন্তান আর তার স্বামী নিয়ে চমৎকার সুখী পরিবার তার। তার দ্বিতীয় মেয়েটি ছিল ম্যাকরনের ক্লাসমেট। সবাই ভাবতো, এমানুয়েল বোধহয় তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু যেদিন সবাই জানতে পারলো ম্যাকরনের মনের মানুষটা আসলে তার ক্লাসমেট না, ক্লাসমেটের মা, সেদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল টিটকারী আর হাসিঠাট্টা। ম্যাকরনের এই অদ্ভুত ভালোবাসার খবর যখন তার বাবা-মা জানতে পারলেন, তারা শুরুতে এর প্রচন্ড বিরোধিতা করলেন। ম্যাকরনের বাবা ব্রিজিতকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, সে যেন তার ছেলের ১৮ বছর হবার আগ পর্যন্ত দূরে থাকে। ব্রিজিত বলেছিল, ‘আমার পক্ষে এমন কথা দেওয়া সম্ভব না।’ শুরুতে খুব অবাক হলেও আস্তে আস্তে ব্রিজিত ম্যাকরনের বুদ্ধিমত্তা আর ভালোবাসায় মুগ্ধ হতে লাগলো। প্রতিদিনের চিঠি আর অল্প অল্প কথায় একটু একটু কথায় ম্যাকরন জয় করে নিল ব্রিজিতকে।

তখনকার সেই স্মৃতির ব্যাপারে বলতে গিয়ে ব্রিজিত বলেছেন,

“I thought he would get bored. We wrote, and little by little I was totally overcome by the intelligence of this boy. We’d call each other all the time and spend hours on the phone. Bit by bit, he defeated all my resistance, in an amazing way, with patience.

ওদিকে ম্যাকরনের বাবা-মা আপ্রাণ চেষ্টা করেও যখন ছেলেকে থামাতে পারলেন না, তখন তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো প্যারিসে। ম্যাকরন গেল, কিন্তু যাবার আগে ৪২ বছর বয়সী ব্রিজিতের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো, একদিন তার সাথে ঘর বাঁধবেই।

কি, শুনতে খুব অদ্ভুত শোনাচ্ছে? মনে হচ্ছে কিশোর বয়সের মাত্রাতিরিক্ত ছেলেমানুষি? আর দশটা ক্ষেত্রে কেমন হতো বলতে পারছি না, তবে ম্যাকরন এই প্রতিজ্ঞাটা কিন্তু স্রেফ ছেলেমানুষি ছিল না! প্যারিসে যাওয়ার পরেও তাদের ভালোবাসার যাত্রা চলতেই থাকলো। একসময় ম্যাকরন গ্রাজুয়েশন করে বেরিয়ে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ে যোগ দিল, কিন্তু কখন তাদের রোমান্স সত্যিকারের ভালোবাসায় রূপ নিল, বলা কঠিন!

অনেক বাধা, সমালোচনা, টিটকারী আর পরিহাস; অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ম্যাকরন তার কথা রাখলো। ঠিক ১৩ বছর পর ব্রিজিতকে সে বিয়ে করলো, যখন তার বয়স ৩০ বছর। আর ৫৫ বছর বয়সী ব্রিজিত ততদিনে ভালোবাসার টানে ছেড়েছেন সব কিছু।

তারপর মেঘে মেঘে গড়ালো অনেক বেলা। রাজনীতির মঞ্চে ম্যাকরন তার পুরনো ঠিকানা সোশ্যালিস্ট পার্টি ছেড়ে En Marche! নতুন দল গড়লেন গত বছরের এপ্রিলে। তার লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। ভাঙ্গা-গড়ার এই কঠিন সময়টায় সবটুকু আস্থা, ভরসা আর সাহস যুগিয়ে ব্রিজিত রইলেন তার পাশে।

শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ বছর সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মেরিনা লোপেনকে টপকে ২৪.০১% ভোট নিয়ে প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এখন দ্বিতীয় রাউন্ডেই হবে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা- ন্যাশনাল ফ্রন্টের মেরিনা লোপেনের সাথে হবে ভোটযুদ্ধ। তার এই অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে প্রধানতম অনুপ্রেরণা ছিল তার স্ত্রী ব্রিজিত। নির্বাচনে দাঁড়াবার আগে ব্রিজিতকে ম্যাকরন বলেছিলেন,

“আমি যদি ফ্রান্সের একটা ছোট্ট প্রভিন্সিয়াল টাউনের অগণিত টিটকারী আর পরিহাস সহ্য করে ২৪ বছরের বড় তিন সন্তানের মা’কে ভালবাসা দিয়ে জয় করতে পারি, তাহলে ফ্রান্সও জয় করতে পারবো।”

এমানুয়েল ম্যাকরন তার কথা রেখেছেন এখানেও! ছেলের চেয়ে মেয়ের বয়স বেশি হলেই আমরা টিটকারী আর পরিহাসের দৃষ্টিতে তাকাই, “ছেলের পাশে মেয়েটাকে একদম মানাচ্ছে না”, “উদ্ভট কাকতাড়ুয়া দেখাচ্ছে” ইত্যাদি কতভাবেই না জাজ করতে শুরু করি। অথচ আমরা ভুলে যাই ভালোবাসা কখনো বয়স হিসেব করে, স্থান-কাল-পাত্র-সমাজ বিবেচনা করে হয় না, ভালোবাসার সম্পর্কে কেবল ভালোবাসার মানুষ দুটো ভালো আছে কিনা, আনন্দে আছে কিনা সেটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। আর সব সঅঅঅবকিছু অর্থহীন হাস্যকর জ্বলুনি, এমনকি আমরা আমাদের নোংরা নাকটা বিনা কারণে গলিয়ে যে অযথা টিটকারী আর পরিহাসটা করি দুজন মানুষকে স্রেফ ভালোবাসার অপরাধে, সেটাও!

সব কিছুর উর্ধ্বে ভালোবাসা- চিরকালীন এই শ্বাশত সত্যটা আরেকবার প্রমাণ করে দিয়ে ম্যাকরন-ব্রিজিত প্রমাণ করলেন, ঘুণে ধরা এই সমাজে সত্যিকার ভালোবাসা আজও আছে, আমাদের মাঝেই!

সংগৃহীত।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

 

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET