নয়া আলো ডেস্কঃ- মহানগরী খুলনার প্রাণকেন্দ্র জোড়াগেট থেকে বাম দিকের সরু রাস্তা ধরে সোজা পশ্চিমে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে বড় প্রাচীরঘেরা প্রেম কানন। সরু রাস্তাটার নাম প্রেম কানন রোড। রাস্তার নামকরণে সেই প্রেম কানন আজ জনহীন। ঈদের ৩য় দিন সোমবারও (১৮ জুন) লোকজনের দেখা মিলছে না এক সময়ের জমজমাট সেই প্রেম কাননে।
৫ বিঘা জমির উপর ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রেম কানন। সেবাইত এস্টেট অব শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দির খুলনার পরিচালনায় ও নির্দেশে ১৩ বছর ধরে মালি হিসেবে প্রেম কাননের দেখভাল করছেন শিবু প্রসাদ রায়।
সুদর্শন ফুলের বাগান, সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো বড় চত্বর। এঁকেবেঁকে চলা ঢালাই রাস্তা, স্বচ্ছ পানির পুকুর, পুকুরের সঙ্গে মেলানো মন্দির। সব মিলিয়ে যে কারও মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই জায়গা প্রেম কানন। সবকিছুর পরও সারা প্রেম কাননে প্রেমের কোনো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেল না! বছর ১৫ আগে এ প্রেম কানন ছিল মানুষের ভিড়ে মুখরিত প্রাণচঞ্চল এক তীর্থস্থান, কোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। ঈদ, পূজা কিংবা সরকারি ছুটির দিনে বিনোদনপ্রেমীরা এখানে ভিড় জমাতো। ছুটির দিনে আড্ডা চলতো সকাল থেকে রাত অবধি। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজ আর তেমনটি নেই।
প্রধান ফটকের বড় গেটে বেশ সুন্দর করে বাংলা ও হিন্দিতে লেখা রয়েছে প্রেম কানন। দেখলে মনে হবে কলকাতার কোনো দর্শনীয় স্থান। আগে মানুষ ভিড় করতো সকাল-সন্ধ্যা। কিন্তু এখন এই ঈদের ছুটিতেও তেমন কেউ আসে না এখানে।
মালি ও প্রেম কাননের দেখভাল করা শিবু প্রসাদ রায়ের স্ত্রী বলেন, প্রেম কাননে এখন আর আগের মতো কেউ আড্ডা দিতে বা ঘুরতে আসে না। আগে ঈদ, পূজা বা সরকারি ছুটির দিনে অনেক লোক ঘুরতে আসতো, কিন্তু এখন আর তেমন আসে না।
১৭ বছর ধরে প্রেম কাননের সামনেই দোকান পরিচালনা করছেন বকুল। তিনি জানান, ২০০৪-৫ সাল পর্যন্ত বাইরের মানুষ আসতো, জমজমাট ছিল। এখন কেউ আসে না। আকাশে কালো মেঘ জমা হয়েছে দেখে বকুল একটু মজার স্বরেই বলেন, এখন আর বৃষ্টিভেজা মানুষের ছোটাছুটি নেই। প্রেম কাননে প্রেমের অভাব স্যার।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খুলনার ছোট গল্পকার নাছির আহমেদ বলেন, প্রেম কানন এক সময় ছিল প্রেমিক-প্রেমিকাদের জমজমাট আড্ডার স্থান। ফাল্গুন মাসের দোলযাত্রার দিন প্রেম কানন সাজানো হতো পরিপাটি করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও প্রায় আশির দশক পর্যন্ত দর্শনার্থীরা আসতো। এখন কিছু নেই। পাতাকুড়ানী আর গোসল করতে আসা লোকজনদের দেখা মেলে। এখানে কেবলই হাহাকার।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে আসলে তাদের লাঞ্চিত করে মোবাইল, টাকা ছিনতেই করে নেয় একটি চক্র। যে কারণে ভয়ে আর এখানে কেউ আসতে চায় না।